Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪ |
K:T:V Clock
Dr. Bidhan Chandra Roy | যেদিন বিধান রায়ের কাছে তর্কে হারলেন গান্ধী
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১ জুলাই, ২০২৩, ০১:১৫:৫৯ পিএম
  • / ৩২৮ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

শুভাশিস মৈত্র: বিধান রায়ের কাছে তর্কে হেরে গেলেন মহাত্মা গান্ধী। সময়টা ১৯৪৩ সাল। জেল থেকে দীর্ঘ অনশন করে অসুস্থ হয়ে গান্ধী বাইরে এসেছেন। আছেন পুনেয়। ঘুসঘুসে জ্বর, ম্যালেরিয়া, সঙ্গে পেটের অসুখ। বেশ কাহিল অবস্থা। কী একটা কাজে বিধান রায় বোম্বাই (তখন মুম্বই নাম ছিল না) এসেছেন। বিধান রায় গান্ধীকে দেখতে গেলেন পুনেয়। ডাক্তার বিধান রায়কে দেখে গান্ধীজি বেজায় খুশি। কিন্তু বিধান রায় যখন বললেন তিনি গান্ধীজির চিকিৎসা করতে চান, বেঁকে বসলেন গান্ধী। গান্ধী অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করতেন না। সব সময় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতেন। গান্ধী বিধান রায়কে বললেন, “তোমার চিকিৎসা তো আমি নিতে পারব না।” বিধান বললেন, ‘আমি কি জানতে পারি আমার কী অপরাধ’? গান্ধী বললেন, “দেশের ৪০ কোটি দীন দুঃখী মানুষের অসুখে যখন তোমার ওই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারো না, তখন আমিই বা তোমার চিকিৎসা নেব কী করে?

বিধান রায় চিন্তায় পড়লেন। বললেন, “ঠিকই মহাত্মাজি, দেশের ৪০ কোটি মানুষের চিকিৎসা আমি করতে পারিনি। এ কথা সত্যি। কিন্তু এই ৪০ কোটি মানুষের যিনি আশা ভরসা, ৪০ কোটি পরাধীন মানুষ যাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, ৪০ কোটি মানুষের পরাধীনতার দুঃখ লাঘবের ভার যার হাতে, যিনি বেঁচে থাকলে ৪০ কোটি মানুষ নিশ্চিন্ত থাকবে, তাঁর চিকিৎসার ভার সেই ৪০ কোটি মানুষ আমার উপর দিয়েছে, আপনি না বললে আমি শুনব কেন?”

গান্ধী বললেন, “ডাক্তার বিধান, আমি তো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা কখনও নিই না।”

বিধান রায় বললেন, “আচ্ছা মহাত্মাজি, আপনি তো বলেন পৃথিবীর সব কিছু, এমনকী ধূলিকণাটি পর্যন্ত ঈশ্বরের সৃষ্টি, এ কথা কি আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন?”

গান্ধী বললেন, “নিশ্চয় নিশ্চয়, আমি বিশ্বাস করি সবই ভগবানের সৃষ্টি।”

বিধান বললেন, “তাহলে মহাত্মাজি, আমাকে বলুন, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাও কি তাঁরই সৃষ্টি তাই না?”

এই বার গান্ধী হেসে ফেললেন। বললেন, তোমার তো ব্যারিস্টার হওয়ার কথা ছিল, তুমি ডাক্তার হলে কী ভাবে?”

বিধান রায় উত্তরে বললেন, “ভগবান আইনজীবী না করে ডাক্তার করেছেন, কারণ তিনি জানতেন, এমন এক দিন আসবে যেদিন ভগবানের সেরা ভক্ত মোহনদাস করমচাঁদের চিকিৎসার ভার পড়বে আমার উপর। উকিল ব্যারিস্টার হয়ে তো আমি অনেক বেশি টাকা রোজগার করতে পারতাম। কিন্তু ভগবানের এক জন প্রিয়তম সন্তানের চিকিৎসা করার সুযোগ তো পেতুম না। এই জন্যেই ভগবান আমাকে ডাক্তার করেছেন।”

যখন নিজেই একজন জেলবন্দি হয়ে জেলের ভিতরে বন্দিদের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন বিধান রায়, সেটাও বলা যেতে পারে বিধান রায়ের জীবনের একটি অন্যতম অধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান রায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ১৯৩০ সালে ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন দিল্লি থেকে। তার পর তাঁকে আনা হয় কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। জেলে ওই সময় বন্দি ছিলেন বর্ধমানের এক গান্ধীবাদী শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য। বিজয়বাবু লিখেছেন, তিনি বর্ধমান জেলে থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। সর্বক্ষণ জ্বর থাকত। এই সময় তাঁকে আনা হয় আলিপুর জেলে।

বিধান রায় জেলে এসেছিলেন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। সাধারণত এটা করা যায় না, কিন্তু সম্ভবত বিধান রায়ের ব্যক্তিত্বের সামনে ওঁরা না বলতে পারেননি। ফলে ডাঃ বিধান রায়ের ডিউটি পড়ল জেলের হাসপাতালে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল জেলে রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে। নিউমোনিয়া, টাইফায়েড ইত্যাদি কিছু কঠিন অসুখের ওষুধ জেলে ছিল না। সে সব বিধান রায় তাঁর দাদা সুবোধ রায়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে নিজের টাকায় কিনে আনাতে শুরু করলেন। কিছু দিনের মধ্যেই ছবিটা যা দাঁড়াল সেটা এই রকম— ছ’ ফুট ছাড়ানো জেলবন্দি এক আসামি স্টেথো গলায় দিয়া জেলের হাসপাতালে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন, পিছন পিছন চলেছেন জেলের সরকারি ডাক্তার।

গান্ধীবাদী সেই শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বিধানবাবু একদিন চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার বিছানার পাশে বসলেন। মিনিট কয়েক চেয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর অসুখ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। হেসে বললেন, ‘কিছু না। সেরে যাবে।’ মনে হল এর মধ্যেই অসুখের সব কিছু বুঝে ফেলেছেন।” বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “কোনও রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে বিধান রায় কিছু ক্ষণ সেই রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।” সেই অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি রোগীকে বোঝার চেষ্টা করতেন। ওই জেল হাসপাতালে তখন ১১০ জন রোগী। বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “এক দিন জেলের ডাক্তার বঙ্কিমবাবু (উপাধি লেখেননি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য) কোনও কারণে আসতে বেশ দেরি করছেন। বিধান রায় একাই এক এক করে ১১০ জন রোগীকে দেখলেন। এর পর ছুটতে ছুটতে বঙ্কিমবাবু এসে হাজির। কাঁচুমাঁচু মুখে বন্দি বিধান রায়কে বললেন, স্যর একটু দেরি হয়ে গেল। বিধান রায় হেসে বললেন, না না ঠিক আছে, রোগী আমি দেখে নিয়েছি, আপনি ওদের টিকিটগুলো আনুন, পথ্য আর ওষুধটা আমি বলে দিচ্ছি।” বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, আধঘণ্টা আগে দেখা ১১০ জন রোগীর প্রত্যেকের ওষুধ, পথ্য প্রায় মুখস্থর মতো এক এক করে বলে গেলেন ডাঃ বিধান রায়।

বিধান রায় জেলে থাকাকালীন পেয়ে গেলেন আর এক বন্দি কানাই গাঙ্গুলিকে। কানাইবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডক্টরেট করেছিলেন জার্মানি থেকে। তিনি বরিশালের শঙ্কর মঠের স্বামী প্রজ্ঞানন্দের বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। পরে গ্রেফতার হন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে। খুব ভালো জার্মান ভাষা জানতেন তিনি। কানাই গাঙ্গুলির সঙ্গে আলাপ হল বিধান রায়ের। বিধান রায় ঠিক করলেন সময় নষ্ট না করে জেলে থাকাকালীন কানাই গাঙ্গুলির কাছে জার্মান ভাষাটা শিখে নেবেন তিনি। এই নিয়ে কানাইবাবু পরে লিখেছিলেন, ছ’মাস জেলে থাকাকালীন বিধান রায় একদিনের জন্যেও বাদ দেননি তাঁর কাছে জার্মান শেখার ক্লাস। এবং যখন জেল ছেড়ে চলে গেলেন, তখন তাঁর এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেছে।

(আজ বিধান রায়ের জন্মদিন এবং চিকিৎসক দিবস। সেই উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই প্রতিবেদন।)

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩
১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০
২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭
২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

ভোট শেষ, রাতারাতি দামবৃদ্ধি গ্যাসের
শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩
ভাগীরথীতে গাড়ি পড়ে মৃত্যু দম্পতির
বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩
বউবাজারে শাড়ির গোডাউনে আগুন
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
দু’দিন পর উদ্ধার তলিয়ে যাওয়া ছাত্রের দেহ
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
শাল-পিয়ালের জঙ্গলে শীতের সকালে চিতা-হরিণের খোঁজে পর্যটকরা
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
পাকিস্তানের করাচির শপিং মলে ভয়াবহ আগুন, মৃত ১১
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর শুভেন্দুর
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
অজানা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত উত্তর চিন, উদ্বেগ প্রকাশ WHO- এর
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
ভোট শুরু রাজস্থানে, ৩ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
ইছামতির পাড় থেকে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
শাহরুলের কাছ থেকে মিলল মানিব্যাগ, আগ্নেয়াস্ত্র
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
লাইসেন্স নম্বর নেই বলে দোকানির হওয়া কারাদণ্ড খারিজ করল হাইকোর্ট
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
কপালের সিঁদুর দিলেই বিয়ে হয় না, জানাল পাটনা হাইকোর্ট
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
সুড়ঙ্গে আপৎকালীন নিকাশ পথ ছিল না, গাফিলতি কার?
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
ওড়িশায় ঝরনায় তলিয়ে গেলেন আশুতোষের মেধাবী ছাত্র
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team